কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ চলছে। তবে সোমবার সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ধাপের এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেক ভোটার বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

এর মধ্যে অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন, চরম ধীরগতিতে ভোটগ্রহণের কারণে ভোটারদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার অনেক বৃদ্ধ ভোটার দাবি করেছেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বুথে গেলেও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছেন না তারা।

এতে অনেকে ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার টনকী ইউনিয়নের সোনারামপুর কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ সফিউল্লাহ লাঠি হাতে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার হাত ধরে প্রবেশ করেছেন ভোট কক্ষে। কিন্তু আঙুলের ছাপ না মেলায় তাকে ফিরতে হচ্ছে ভোট না দিয়েই। সফিউল্লাহর মতো ফিরে গেছেন মনির মোল্লা (৬৫) ও জোবেদা খাতুন (৭৮)। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা তাঁদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন দুপুর নাগাদ আরেকবার ভোটকেন্দ্রে আসতে।

সোনারামপুর কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা বৃদ্ধ সফিউল্লাহ বলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে অনেক কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে এসেছি। আবার দুপুরে আসতে পারব কি না জানি না। ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

এদিকে, সোনারামপুর কেন্দ্রে এক ঘণ্টায় তিনটি বুথে ৬৫টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ওই কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মেলায় ফিরে গেছেন প্রায় ৩০ জন ভোটার।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. মনিরুল হক জানান, অনেকের আঙুলের ছাপে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি দুপুর নাগাদ আরেকবার আসতে। এসব কারণে ভোটগ্রহণে ধীরগতি হচ্ছে।

এদিকে, ইভিএমে ভোটগ্রহণের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোটাররা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ায় এ সমস্যা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের আকাব্বরেরনেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, চরম ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ চলছে। অনেক ভোটার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারছেন না। আবার অনেকে মাঠে বসে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।

ওই কেন্দ্রের ৫ নম্বর বুথে ভোটারসংখ্যা ৩৫৬ জন। প্রথম এক ঘণ্টায় ভোটগ্রহণ হয় মাত্র ৯টি। পরের এক ঘণ্টায় ২৩টি। এ বুথের ভোটার জোহরা বেগম বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ভোট দিতে পারেননি তিনি।

কেন্দ্রের প্রিজাইজিং কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, এ কেন্দ্রে দুই হাজার দুইজন ভোটার আছেন। ছয়টি বুথ। সকাল আটটা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। মুরাদনগরে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। সবাই এই পদ্ধতিতে নতুন হওয়ায় ভোটগ্রহণে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। আশা করি চারটা পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করা যাবে।

কুমিল্লা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম জানান, বিকেল ৪টায় ভোটকেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। যারা ৪টার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন, তাদের সবার ভোটগ্রহণ করা হবে।

কলমকথা/রোজ